কারা পাবে এতো বরাদ্দ?

কারা পাবে এতো বরাদ্দ?


 

আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়িয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এবার তিনি এই খাতে ১ লাখ ৭ হাজার ৬১৪ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন, যা চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের চেয়ে ১২ হাজার ৩৬ কোটি টাকা বেশি। চলতি অর্থবছর এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৯৫ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা।

বাজেটে অর্থমন্ত্রীর এই প্রস্তাবের পর ঢাকার মিরপুর ১২ নম্বরের বৃন্দাবন বস্তির বাসিন্দা আসাদুল ইসলামের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হয় প্রথম আলোর। তিনি বলছিলেন, ‘বাজেটে গরিবদের জন্য অনেক টাকা রাখা হয়েছে শুনেছি। আমিও তো গরিব। এখানে আমার মতো কয়েক শ গরিব লোক আছে। আমাদের কষ্ট দূর করার কোনো টাকা কি সরকার রেখেছে?’



সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বড় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু যাঁরা এটি পাওয়ার উপযুক্ত না হয়েও নিচ্ছেন, তা রোধে কোনো পদক্ষেপ নেই



প্রস্তাবিত বাজেটের মোট আকার ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ করা হয়েছে বাজেটের ১৭ দশমিক ৮৩ শতাংশ অর্থ। এই অর্থ মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৩ দশমিক ১১ শতাংশ। আগামী অর্থবছরের জিডিপির আকার ধরা হয়েছে ৩৪ লাখ ৫৬ হাজার ৪০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ ছিল বাজেটের ১৬ দশমিক ৮৩ আর জিডিপি ৩ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ।

বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অবস্থার উন্নয়নে এই খাতে সরকার প্রতিবছর বরাদ্দ বাড়িয়ে চলেছে। এ সময় তিনি টেনে আনেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলামের উপস্থাপিত ২০০৮-০৯ অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ১৩ হাজার ৮৪৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করার প্রসঙ্গ। তবে ওই অর্থবছরে যে বাজেটের আকার ছিল মাত্র ৯৯ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা, তা আর বলেননি মুস্তফা কামাল। মির্জ্জা আজিজের ওই বাজেটের ১৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ বরাদ্দ ছিল সামাজিক নিরাপত্তা খাতে। সেই হিসাবে ১৩ বছরে এই খাতে বরাদ্দ বেড়েছে ৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ।

সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ১৩৪টি বিষয়ের কথা উল্লেখ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ। এর মধ্যে ভাতা হিসেবে রয়েছে নয়টি। এগুলো হচ্ছে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা ভাতা, বেদে, রূপান্তরিত মানুষ ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচি, প্রতিবন্ধী ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা ও সরকারি কর্মচারীদের পেনশন। এগুলোতে ব্যয় হবে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা, যার মধ্যে পেনশনের অংশই প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা।

বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, সবচেয়ে বেশি দারিদ্র্যপ্রবণ ১১২টি উপজেলার দরিদ্র শতভাগ প্রবীণ ব্যক্তি এবং বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতদের ভাতার আওতায় রয়েছেন। এবার আওতায় আসছে আরও ১৫০টি উপজেলা। বর্তমানে বয়স্ক ভাতা পান ৪৯ লাখ জন এবং বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা ভাতা পান ২০ লাখ ৫০ হাজার জন। নতুন করে বয়স্ক ভাতার সুবিধা পাবেন ৮ লাখ এবং সোয়া ৪ লাখ বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মানুষ।

এ ছাড়া বর্তমানে ১৮ লাখ অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছেন। আগামী অর্থবছরে এই সুবিধাভোগীর সংখ্যা ২ লাখ ৮ হাজার জন বাড়বে। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক সম্মানী ভাতাও বর্তমানের ১২ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী


এদিক সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি নিয়ে অর্থ বিভাগের তৈরি তালিকায় দেখা যায়, ‘খাদ্য নিরাপত্তা ও কর্মসৃজন কর্মসূচি’ উপশিরোনামের আওতায় টিআর, জিআর, ভিজিডি, ভিজিএফ ইত্যাদি সাতটি বিষয়ে ১৫ হাজার ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেখানো হয়েছে। আর শিক্ষার্থীদের বৃত্তি বাবদ ছয়টি আলাদা হিসাবে দেখানো হয়েছে ৪ হাজার ২৭৩ কোটি টাকার বরাদ্দ।

এ ছাড়া নগদ ও খাদ্যসহায়তা সংক্রান্ত ১৭টি বিষয়ে ২০ হাজার ১৮২ কোটি, ঋণ সহায়তার চারটি বিষয়ে ১ হাজার ১৭৭ কোটি, বিশেষ সম্প্রদায় ও জনগোষ্ঠীর ১২টি বিষয়ে ৫৯২ কোটি, নয়টি বিভিন্ন তহবিল ও কর্মসূচিতে ১২ হাজার ৯৪ কোটি, ৩৫টি উন্নয়ন কর্মসূচিতে ১০ হাজার ৩৬৬ কোটি এবং ১৭টি নতুন উন্নয়ন প্রকল্পে ৩ হাজার ৪২৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি অধিকতর কার্যকর করতে ২০১৫ সালে সরকার পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) মাধ্যমে জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশল (এনএসএসএস) প্রণয়ন করে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিগুলোর বাস্তবায়ন পরিস্থিতি নিয়ে চলতি বছরের জানুয়ারিতে এনএসএসএসের একটি মধ্যবর্তী উন্নয়ন পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। জানা যায়, ৪৬ শতাংশ ভাতাভোগী উপযুক্ত না হয়েও তা নিচ্ছেন।





Ads on article

Advertise in articles 1

advertising articles 2

Advertise under the article